রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম একটি এলাকার একটি হলো ফার্মগেট। দিনের বেলায় মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এ এলাকা। তাই খালি চোখে দেখে হয়তো অনেক কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু রাতের নিরবতা যত বাড়ে, ততই এই এলাকায় আনাগোনা বাড়ে দেহ ব্যবসায়ীদের। খদ্দেরের খোঁজে বোরকা পরে অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাদের রাস্তার ধারে।
সরেজমিনে ফার্মগেটে গিয়ে দেখা যায়, খদ্দেরের খোঁজে বোরকা পরে এখানে-সেখানে অপেক্ষা করছেন পতিতারা। তাদের পাশেই সারি-সারি সিএনজি দাঁড়িয়ে আছে। খদ্দের এসে প্রথমে দামাদামি করে। এরপর চূড়ান্ত হলে নিয়ে যায় সিএনজি করে।
তাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ মানুষকেও বিরক্ত করে। ‘নিবি’, ‘লাগবে’ বলে বিভিন্ন ইশারা দেয় তারা। এতে অনেক পথচারীও বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন।
সোহেল হাসান নামের একজন পথচারী বলেন, ‘ওরা সুযোগ বুঝে ইশারা দেয়, নানান রকম অশ্লীল কথাও বলে।’
সাংবাদিক পরিচয় গোপন রেখে কথা হয় নিতু নামের এক পতিতার সঙ্গে। সদ্য এ পথে পা বাড়িয়েছে বলে দাবি তার। কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে বাড়ি বলে জানান নিতু।
তিনি বলেন, ‘আমি যে এ পেশায় আছি তা আমার পরিবারের কেউই জানে না। টাকার অভাবেই এ পেশাই আসছি।’ এত পেশা থাকতে এ পেশায় আসলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো উত্তরই দেননি তিনি।
নিতু জানায়, ‘আধাঘন্টার জন্য নিয়ে গেলে ৫০০ টাকা আর পুরো রাতের জন্য নিয়ে গেলে ১ হাজার টাকা নেই। আমি রাতেই ফার্মগেটে আসি। হোটেলে বা খদ্দেরের বাসায় যেয়ে কাজ করি।’
তার দাবি, ‘খদ্দের অনেক সময় ৫০০ টাকার কথা বলে নিয়ে যায় কাজ শেষে ২০০ বা ৩০০ টাকা দেয়। প্রতিবাদ করলেও লাভ হয়না। আবার মাঝেমধ্যে অনেকে আরও কম টাকাও দেয়।’
নিতুর সাথে কথা বলে সামনে এগুতেই দেখা যায়, আরও চার পতিতা একসঙ্গেই বসে আছেন। বিভিন্ন সিএনজি তাদের সামনেই থামে, মাঝে-মধ্যে সিএনজি চালকদের সাথেও খোশগল্পে মাতে তারা।
জানা গেছে, ফার্মগেটে সাধারণত পতিতারা বিকেল থেকে সন্ধ্যা বা রাতেই আসে। কেউ কেউ আবার মধ্যরাতেও বের হয়। সকাল হলেই ফেরে ঘরে।
শাহীন নামের একজন ভ্যনচালক বলেন, ‘আমি এই জায়গাতে ভ্যান চালাই দীর্ঘদিন গত চার বছর ধরে। এদেরকে (পতিতা) প্রতি রাতেই দেখি। ভোরে আবার চলে যায় তারা।’
তিনি বলেন, ‘এদের সিএনজি চালকও ঠিক করা থাকে। খদ্দের ঠিক হলেই সিএনজি করে চলে যায়। অনেকসময় সিএনজিতেই তারা এ কাজ করে।’
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক আরেক ভ্যানচালক বলেন, ‘এদের মধ্যে কিছু প্রতারকও থাকে। তারা সিএনজিতে নিয়ে খদ্দেরকে প্রতারণা করে, টাকা, মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। মান-সম্মানের ভয়ে অনেকেই তা প্রকাশ করে না।