অজু করার সময় যে দোয়াটি পাঠ করলে অজুর পানির সাথে গোনাহসমূহ ধুয়ে যায়

নামাজ বেহেশতের চাবি আর এই নামাজের চাবি হলো ওযু। সুতরাং নামাজ সহিহ হওয়ার প্রধান শর্ত ওযু। তবে শুধু ওযু বললে ভুল হবে। সঠিক ভাবে সঠিক নিয়মে ওযু করে নামাজ আদায় করলে মহান আল্লাহ তায়ালা সেই বান্দার নামাজ কবুল করে নেন।

এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় নবী রাসূলে পাক (সা.) বলেছেন, ওযু করা অবস্থায় এমন কিছু দোয়া রয়েছে যা পাঠ করতে করতে কোন বান্দা যখন অজু করে এবং মুখ ধৌত করে, তখন মুখের যাবতীয় গোনাহ অজুর পানির সঙ্গে ধুয়ে যায়। ডান হাত, বাঁ হাত, এভাবে যে অঙ্গই ধৌত করবে, সেই অঙ্গের সগিরা গোনাহ ধুয়ে যায়। [মুসলিম : ৩৬০]।

অজুতে মুখ ধোয়ার সময় এ খেয়াল করতে হবে, রাসুলুল্লাহ [সা.] এর সুসংবাদ অনুযায়ী আমার মুখের যত গোনাহ আছে, সব ধুয়ে যাচ্ছে। হাত ধোয়া, মাথা মাসাহ করা এবং পা ধোয়ার সময়ও এমনটি খেয়াল করবে। এমনটি খেয়াল করে অজু করে দেখুন, ভালো লাগবে।

খেয়ালহীন অজুর চেয়ে অবশ্যই হাজারগুণে ভালো লাগবে। অজুর মাঝে দোয়াগুলো পাঠ করুন। একটু খেয়ালের সঙ্গে সব আদব ও সুন্নতের প্রতি খেয়াল রেখে অজু করুন। কেবলা দিকে বসুন। প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধৌত করুন। সুন্দর করে ধৌত করুন। অজুর মাঝে যেসব মাসনুন দোয়া আছে, সেগুলো পড়ুন। যেমন-

‘আল্লাহুম্মাগফিরলি জাম্বি, ওয়া ওয়াচ্ছি-লি ফি দারি, ওয়া বা-রিক-লি ফি-মা রজাক-তানি।’ [তিরমিজি : ৩৪২২]। এর সঙ্গে কালেমায়ে শাহাদাতও মাঝেমধ্যে পড়বেন। আর অজু শেষ করে নিম্নের দোয়াটি পড়ুন, ‘আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিন, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-তহ-হিরিন।’ [তিরমিজি : ৫০]।

৭ শ্রেণির ব্যাক্তিকে কবরে কোনো প্রশ্ন করা হবে না

মহান আল্লাহর অনুগ্রহে কিছু মানুষ এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন যে, তাকে কবরদেশে সুওয়াল জাওয়াবের সম্মুখীন হতে হবে না।এ বৈশিষ্ট্যের অধিকারীদের মধ্যে প্রথমে আসবে শহিদদের নাম।

রাসুলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, শহিদদেরকে কবরে প্রশ্ন করা হবে না। কেননা মাথায় তরবারির আঘাত কবরের বিপদ হতে কম নয়। যদি তার অমত্মরে আল্লাহর ভয় না থেকে মুনাফেকি থাকতো তাহলে সে তরবারির ভয়ে পালিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু সে এমনটি করেনি। কাজেই প্রমাণিত হলো, সে তার ঈমানের ক্ষেত্রে সত্যিই মুখলিস বা নিষ্ঠাবান ছিলো।

কবরের সুওয়াল হতে মুক্তিপ্রাপ্ত দ্বিতীয় ব্যক্তি হলো, সীমান্তরক্ষী সৈনিক; যাকে প্রতিনিয়ত শত্রুদলের সঙ্গে সংগ্রাম ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে যেতে হয়।

তৃতীয় ব্যক্তি হলো, যিনি মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, কেননা সহিহ হাদিসের ভাষ্যমতে সেও শহিদদের মিছিলের একজন।

চতুর্থ ব্যক্তি হলো, আপাদমস্তক আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর সত্যনিষ্ঠ আস্থা ও বিশ্বাসের অধিকারী সত্যবাদী সিদ্দিক। যাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোথাও মিথ্যার লেশমাত্র নেই।

নবিদের পরই তাঁদের স্থান। ইমাম তিরমিযি ও ইমাম কুরতুবি [রহ.] এভাবে সুস্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত মূলনীতির আলোকে অকাট্যভাবে প্রতিভাত হয় যে, আল্লাহর প্রেরীত সকল নবি রাসুলও কবরে সুওয়াল জাওয়াবের সম্মুখীন হবেন না। কেননা তাঁদের স্থান তো সিদ্দিক থেকে কত সহস্র ঊর্ধ্বে।

পঞ্চমজন হলো, অপ্রাপ্ত বয়সে কোনো শিশু মারা গেলে তাকে সুওয়ালের সম্মুখীন হতে হবে না। প্রখ্যাত আকাইদবিদ আল্লামা নাসাফি [রহ.] দৃঢ়তার সঙ্গে বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। ইমাম নববি [রহ.]ও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে সালাহ [রহ.] বলেন, শিশু মারা গেলে তাকে কালিমায়ে শাহাদাতের তালকিন করার দরকার নেই।

আর পাগল ও বোকা লোকদের কবরে সুওয়াল জওয়াব করা হবে কিনা এ বিষয়ে ইমাম ফাকেহানি [রহ.] মৌনতা অবলম্বন করেছেন। তদ্রুপ যে ব্যক্তি দুই নবির পৃথিবীতে আগমনের মধ্যবর্তী যুগে মারা গেছেন, তাকেও কবরে সুওয়াল করা হবে কিনা? এ বিষয়েও কোনো মত প্রকাশ করেননি। রওযা নামক কিতাবে এ বর্ণনা এসেছে, যে ব্যক্তি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুকাল্লাফ [যার ওপর শরিয়তের হুকুম-আহকাম বর্তিত হয়] বা তার সমগোত্রীয়, একমাত্র তাকে সুওয়াল করা হবে। এছাড়া অন্য কাউকে নয়।

ষষ্ঠ ব্যক্তি হলো, ওই ব্যক্তি যে জুমার দিনে বা রাতে মারা যাবে তাকেও কবরে সুওয়াল করা হবে না। নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার ফজিলত সম্পর্কিত একটি হাদিসে তা উল্লেখ করেছেন।উক্ত হাদিসটিকে ইমাম তিরমিযি ও ইমাম বাইহাকি [রহ.] হাসান স্তরের হাদিস রূপে অভিহিত করেছেন এবং বিভিন্ন সনদে তার স্বপ্ন শাহিদ রেওয়ায়েতও পেশ করেছেন।

কবরের সুওয়াল হতে পরিত্রাণপ্রাপ্ত সপ্তম ব্যক্তি হলো, যে প্রতি রাতে আল্লাহর রহমত প্রাপ্তির প্রত্যাশায় সুরা তাবারাকাল্লাযি তিলাওয়াত করবে।এ সম্পর্কিত আরো কিছু হাদিস রয়েছে; যা সুনানে আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ি এবং ইবনে মাযাহ প্রভৃতি গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে। কোনো বর্ণনায় এ সুরার সঙ্গে সুরা সাজদাকেও সংযুক্ত করা হয়েছে।