মাত্র ৩ টি ঢ্যাড়স নিয়ন্ত্রণে রাখবে আপনার ডায়াবেটিস !

বর্তমান বিশ্বে ক্যান্সারের মতোই ডায়াবেটিস একটি ভয়ঙ্কর মারণ রোগে পরিনত হয়েছে। সম্প্রোতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ১৯৮০ সালে বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৮০ লক্ষ। বর্তমানে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটি ২০ লক্ষ।

ডায়াবেটিস একটি বিপাকীয় প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ব্যাধী। ডায়াবেটিসের ফলে দেহ পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে।

এই রোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক বিষয়টি হল, অষুধ, শরীরচর্চা এবং খাওয়া-দাওয়া নিয়ম মেনে করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু তা কোনও ভাবেই পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে রোজ রোজ ইনসুলিন ইনজেক্সন না নিয়েও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এই ঘরোয়া উপায়ে, একেবারে সামান্য খরচে। প্রতিদিন মাত্র তিনটি ঢ্যাড়সই রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কী ভাবে।

তিনটি ঢ্যাড়স নিয়ে ভাল করে জলে ধুয়ে নিন।

এর পর সেগুলির সামনের দিকের সামান্য অংশ (ডগার অংশ) এবং বৃন্তের অংশ বাদ দিয়ে দিন।এ বার ঢ্যাড়সগুলি লম্বা করে চিরে দিয়ে সারা রাত এক গ্লাস জলে ভিজিয়ে রাখুন।সকালে উঠে এই ঢ্যাড়স ভেজানো জল খেয়ে নিন।

রক্তে সুগারের মাত্রা কতটা কমল তা হাতেনাতে প্রমাণ পেতে এই জল খাওয়ার আগে ও জল খাওয়ার দু’ ঘণ্টা পরে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করুন। তফাতটা নিজেই দেখতে পাবেন। তবে এর সঙ্গে শরীর সুস্থ রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৪০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে হাঁটাহাঁটি করুন। প্রয়োজনে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। ডায়াবেটিসের আতঙ্ক কাটিয়ে সুস্থ ভাবে বাঁচুন।

কিডনি সুস্থ রাখতে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না

কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। বাংলাদেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রতিবছর অনেক মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাও বেশ ব্যয়বহুল। তাই আগে থেকেই কিডনির যত্ন নেয়া উচিত।

মানুষের শরীরে দুটি কিডনি থাকে যেগুলো শরীরের পানির ভারসাম্য রক্ষা করে এবং বিভিন্ন দূষিত পদার্থ ছেঁকে ফেলে। এই কিডনি যদি আপনার শরীরের কাজ না করে তবে আমরা বলে থাকি কিডনি নষ্ট হতে চলেছে। আর কিডনি কাজ না করলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেবে।

তাই কিডনি ভালো রাখাতে হলে খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে আপনার কিডনি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আসুন জেনে নেই কিডনি ভালো রাখতে হলে যেসব খাবার ভুলেও খাবেন না।

১. প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল খাবার খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত ঘাম হলে পানি খাওয়ার পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেলে কিডনিতে পাথর হয় না এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ঠিক থাকে।

২. মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চা চামচ লবণের চাহিদা থাকে। তাই কিডনি সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করার অভ্যাস করুন।

২. গরুর মাংস, শুকরের মাংস ইত্যাদি খেলে কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এমনকি চিপস, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ইন্সট্যান্ট নুডলস এবং লবণ দিয়ে ভাজা বাদামও কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৩. খাবার তালিকায় অতিরিক্ত প্রোটিন থাকলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে এবং কিডনির দুর্বল কোষগুলোর ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রাণিজ প্রোটিন এড়িয়ে মাছ বা ডাল জাতীয় প্রোটিন রাখুন।

৪. রক্তচাপ ১৪০/৯০ এর উপরে থাকলে কিডনির সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কিডনি ভালো রাখতে রক্তচাপ সবসময় ১৩০/৮০ অথবা এর কম রাখার চেষ্টা করুন।

৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না রাখলে কিডনির রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিয়মিত রক্তের সুগারের পরিমাণ পরীক্ষা করান। সুগার বেশি থাকলে মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।

৬. কম বেশি প্রায় সব ওষুধই কিডনির জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে ব্যথানাশক ওষুধগুলো কিডনির জন্য একেবারেই ভালো নয়। নিয়ম না জেনে নিজে ওষুধ খাবেন না।

৭. মানুষের শরীরে প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ভিটামিন সি এর প্রয়োজন নেই। নিয়মিত প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভিটামিন সি যুক্ত খাবার খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশংকা থাকে। তাই প্রতিদিন ৫০০ মিলিগ্রাম বা এর কম ভিটামিন সি গ্রহণ করুন।

৮. অনেকেই পানির বদলে কোমল পানীয় বা বিভিন্ন রকমের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন। এ ধরনের পানীয় কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৯. ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে ধীরে ধীরে কিডনিতে রক্ত চলাচল কমে যেতে থাকে এবং এর ফলে কিডনির কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। ফলে ধূমপায়ী ও মদ্যপায়ী ব্যক্তি একপর্যায়ে গিয়ে কিডনির রোগে আক্রান্ত হয়।

কিডনির পরীক্ষা করান

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত ওজন অথবা পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। যাদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আছে তাদের অবশ্যই নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।

লেখক : নেফ্রোলজি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল