পুলিশের বিরুদ্ধে শিপ্রার মামলা নেয়নি কক্সবাজার থানা !

ব্যক্তিগত ছবি ফেসবুকে পোস্টকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ডি’জি’টা’ল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে গিয়েছিলেন শিপ্রা দেবনাথ।

মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কক্সবাজার মডেল থানায় মামলা করতে যান শিপ্রা। তবে তার মামলা নেয়নি কক্সবাজার মডেল থানা।

মামলা না নেয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার ওসি খাইরুজ্জামান বলেছেন, পুলিশের গু’লি’তে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের নি’হ’তে ঘটনাস্থলটি রামু থানার অর্ন্তগত।

তাই শিপ্রা দেবনাথের আইনজীবীকে পরামর্শ দিয়েছি যে, সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে ও বিশেষ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করতে।

থানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের শিপ্রার আইনজীবী মাহবুবুল আলম টিপু বলেন, কক্সবাজার সদর থানা মামলাটা নেয়নি। ওসি বলেছেন, যেহেতু শিপ্রাসহ পুরো টিমের ডিভাইস রামু থানা জব্দ করেছে তাই এই অভিযোগটা ওই থানায় দেয়াই সংগত। আমরা আপনাদের সঙ্গে আবার বসব। আমরা আগে মামলাটা ফাইল করি।

উল্লেখ্য, পুলিশের মামলায় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিপ্রা দেবনাথের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এ ঘটনায় জড়িতদের বিচার চেয়ে শিপ্রা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাকে হেনস্তায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করারও ঘোষণা দেন তিনি।

এই বিষয়ে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। রিট আবেদনে শিপ্রাকে নিয়ে ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট করায় পুলিশের দুই কর্মকর্তা-সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের এসপি মিজানুর রহমান শেলির বিষয়ে তদন্তেরও নির্দেশনা চাওয়া হয়।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন, টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী, খলনায়ক ইলিয়াস কোবরাসহ ৮ জনের ব্যাংক হিসাব ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইউ)।

সোমবার বিএফআইইউ থেকে দেশে কার্যরত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে চিঠি ইস্যু করার দিন থেকে তিনদিনের মধ্যে স্থগিত করা হিসাবগুলোর নাম, নম্বর, স্থিতি এ সংক্রান্ত তথ্যাদি (হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি প্রোফাইল ফরম, হালনাগাদ লেনদেনের বিবরণী) পাঠাতে বলা হয়েছে।

চিঠিতে যে ৮ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত ও তথ্য চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন- এবিএম মাসুদ হোসেন, প্রদীপ কুমার দাশ, চুমকী কারান, প্রতীম কুমার দাশ, প্রতুশ কুমার দাশ, মো. লিয়াকত আলী, দিলীপ ও ইলিয়াস কোবরার।

হিসাবগুলোকে লেনদেন মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ক্ষমতাবলে ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া চিঠিতে প্রত্যেকের নামের পাশে জন্ম তারিখ ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় দুটি মামলা করে। আর রামু থানায় একটি মামলা করে।

পরে ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এতে ৯ জনকে আসামি করা হয়।

আসামিরা হলেন- টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ, টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহার হওয়া পরিদর্শক লিয়াকত আলী, উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, পুলিশ কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, মো. মোস্তফা ও এসআই টুটুল। এদের মধ্যে আসামি মোস্তফা ও টুটুল পলাতক।

এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া পুলিশের চার সদস্য এবং এ ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে গত শুক্রবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে র‌্যাব।

যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তারা হলেন–সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর রহমান, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াছ।

এরইমধ্যে ব্যাংক হিসাব স্থগিতের এ নির্দেশনা এল।