মানুষ বেচাকেনার হাট বসে রংপুরে !

দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও মানুষ কেনা-বেচা হয়, হাট বসে রংপুরে। ভোর বেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে এসব হাটে, অপেক্ষায় থাকে নিজেকে বিক্রির জন্য।

ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে যায় তাদের।

শাপলাচত্বর। উত্তরের অন্যতম বৃহৎ ও প্রাচীন শহর রংপুরের প্রাণকেন্দ্র। এই চত্বকে ঘিরে আলাদা আলাদা দলবেঁধে বসে থাকা মানুষগুলো অপেক্ষা করছে ক্রেতা বা খরিদ্দারের।

খরিদদার এসে পছন্দ মতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেবে এই মানুষগুলো। আর এভাবে বিক্রি করতে পারলে তবেই তাদের পরিবারের খাওয়া-পাড়ার ব্যবস্থা হয়।

বাসাবাড়ির নির্মাণের জন্য রাজমিস্ত্রি, কাঠ মিস্ত্রি, ইট-পাথর-বালু পরিবহণের শ্রমিক, খেতমজুর থেকে বাগানের মালি। সব রকম কাজের মানুষ মেলে এখানে। স্বাভাবিক সময় সপ্তাহের বেশি ভাগ সময় কাজ জুটতো, কিন্তু করোনার প্রভাবে কাজ জোটানো ভার।

কর্মক্ষম, তাই চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সরকারি সাহায্য বা প্রণোদনার তালিকায় নাম তোলে না। প্রাকৃতিক বা অন্য কোনো দুর্যোগে কাজ হারালে কষ্টে কাটে তাদের দিন।


সবধরণের কাজের জন্য এখানে মানুষ পাওয়া যায়। পছন্দের দামে একটি নির্দিষ্ট কাজ বা পুরো একটি দিনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক মানুষ কিনতে এখানে ভিড় করেন অনেকে।

এর মধ্যে নাটুয়ারপাড়া হচ্ছে অন্যতম। প্রতি হাটের দিন এই হাট বেশ জমে ওঠে। এই সময় কাজিপুরের মাঠে মাঠে বাদাম, কাউন ও তিলের সমারোহ থাকে। শ্রমিকের দামও থাকে বেশ চড়া।

বুধবার নাটুয়ারপাড়া হাটে গিয়ে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপর আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেই দাঁড়িয়ে।

হাটের ভেতরে ঢুকতেই এক শ্রমিক হ্যান্ডশেইকের জন্য হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘মামা কামলা লাগবো? কত দিবেন?’ বাড়ানো হাত ধরেই সাংবাদিক পরিচয়ে কথা হয় তার সাথে। তার নাম আব্দুর রশিদ (৪৮)। বাড়ি বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বিজরীল গ্রামে। তিনিসহ সাতজনের একটি দল ওইদিনই নাটুয়ারপাড়া আসেন। অন্য ছয়জন ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছেন। তিনি আরো বেশি দামে বিক্রি হওয়ার আশায় দাঁড়িয়ে আসেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নেই। বইসা থাইকা কি করব? তাই এখানে বাদাম, তিল ও মাটি কাটার জন্য আইছি। কিছু টাকা জমিয়ে চলা (চলে)যামু।’

রংপুর থেকে এসেছেন দুদু মিয়া (৪৬)। এ দলেও সদস্য ৯ জন । দুদু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নাই। বইসা থাকার চেয়ে বেগার খাটা ভালো। ১০/১৫ দিন বাদাম, তিল ও মাটি কাইটে চইল্লা যামু।’ প্রতি বছরই তিনি এই এলাকায় বাদাম তোলা, তিল ও কাউন কাটতে আসনে বলে জানান।

আক্ষেপ করে দুদু জানান, তার ৮ বিঘা জমি ছিল। ১৬ বছর আগে রাক্ষেষে নদী তা কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন অন্যের জায়গায় থাকেন। এজন্য তাকে ভাড়া দিতে হয়। তার দলে রাশেদ নামে নবম শ্রেণীর একজন ছাত্রও আছে। রাশেদ বলেন, ‘এখন ইসকুল (স্কুল) বন্ধ আছে। তাই আব্বার সাথে বাদাম তোলা ও কাউন কাটবার আইছি’।

বগুড়ার ধুটের বাঁশপাতা গ্রাম থেকে আসা একটি দলের প্রধান হলেন ফললুল হক (৪৫)। এ দলের সদস্য ৮ জন। ফললুল হক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নেই।

টাকা দিলেই জোড়া লাগে তিতাসের বিচ্ছিন্ন সংযোগ

ব্যাপক সমালোচনার মুখে অবশেষে কাজ দেখানো শুরু করেছে তিতাস। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে মাঠে নেমেছে তারা। কিন্তু স্থানীয়রা অভিযান চলাকালে কর্মকর্তাদের সামনেই বলেছেন, টাকা দিলেই জুড়ে যায় কাটা পড়া সংযোগ।

একজন দু’জন নয় খিলগাঁওয়ের শেষপ্রান্তে অবস্থিত শেখেরবাজার এলাকার কয়েক হাজার মানুষ ব্যবহার করতেন অবৈধ সংযোগ। মূল সংযোগ থেকে খালের নিচ দিয়ে লাইন নিয়েছেন তারা।

গত মার্চে একই এলাকায় একই লাইন উচ্ছেদ হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সেখানে আবারও চলেছে অভিযান।

সংযোগ বিচ্ছিন্নের সময় স্থানীয়রা বলছিলেন, টাকা দিলেই জোড়া লাগে বিচ্ছিন্ন সংযোগ। অভিযানের ৭ দিনের মাথায় আবারো জুড়ে গেছে লাইন।

অভিযানের এক পর্যায়ে কর্মকর্তারা স্থানীয়দের জেরার মুখে পড়েন। তবে এসব বিষয়ে কোনো কথা বলতেই রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ।


করোনার কারণে গত মার্চ থেকে অভিযান হয়নি। নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বি’স্ফো’র’ণে’র পর সমালোচনার মুখে আবারো শুরু হলো অ’বৈ’ধ সংযোগ উচ্ছেদের কাজ।