রাশিয়া দাঁড়িয়েছে মজলুম ফিলিস্তিনিদের পাশে !

মজলুম ফিলিস্তিনিদের পক্ষে- রাশিয়া বলেছে, ইসরাইল -ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের অবসান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি আসবে বলে মনে করা হলে তা হবে বড় ভুল।

বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে একথা বলেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, কয়েকটি আরব রাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চুক্তি হলেও ফিলিস্তিন ইস্যু এখনও মূল সমস্যা হিসেবেই রয়ে গেছে।

এ প্রেক্ষাপটে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা। এমন প্রচেষ্টায় রাশিয়া যুক্ত হতে প্রস্তুত রয়েছে।

গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকারি বাসভবন হোয়াইট হাউসে ইসরাইলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তিতে সই করে।

এ চুক্তিকে ফিলিস্তিনের সমস্ত দল ও সংগঠন বিশ্বাসঘাতকতা বলে উল্লেখ করেছে। এই চুক্তিকে প্রত্যাখান করেছে ফিলিস্তিনবাসী।

আরও পড়ুন…

চাবাহার থেকে চীনকে দূরে রাখতে ইরানের কাছে ভারতের ধর্না

চীন ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতায় ভারতের মধ্য অস্বস্তি বাড়ছে। তেহরান ও বেইজিং ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা করছে বলে জানা গেছে।

সন্দেহ করা হচ্ছে যে ইরানের সঙ্গে চীনের ৪০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি ইরানী বন্দুরগুলোতে চীনা বিনিয়োগ বাড়াবে। এগুলোর মধ্যে কৌশলগত চাবাহার বন্দরও রয়েছে।

চাবাহারে ভারতের স্বার্থ প্রচুর। একে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ভারতের প্রবেশদ্বার মনে করা হয়। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই থেকে ১,৪০০ কিলোমিটার দূরে এই বন্দরের অবস্থান।

গত সপ্তাহে ভারতের দুই সিনিয়র মন্ত্রী তেহরানে ঝটিকা সফর করেন। তাদের এই সফর আঞ্চলিক ভাষ্যকার ও নীতিপ্রণেতাদের মনযোগ কেড়েছে।

রাজনাথ সিং ছিলেন গত দুই দশকের মধ্যে ইরান সফরকারী প্রথম কোন ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী। গত সপ্তাহে মস্কো থেকে ফেরার পথে তিনি তেহরানে যাত্রাবিরতি করেন এবং তার ইরানি প্রতিপক্ষ আমির হাতামির সঙ্গে কথা বলেন।

তার এই অবাক করা সফরের পরপরই সেখানে যান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তিনি মস্কোতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন।

তেহরানে তার সংক্ষিপ্ত যাত্রবিরতিকালে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, দ্বিপক্ষিক সহযোগিতা এগিয়ে নেয়া ও গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুগুলো নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।

সরকারি বক্তব্য যাই হোক না উপর্যুপরি দুই সফর ভারত ও ইরানে যথেষ্ঠ গুঞ্জন তৈরি করে। বিশেষ করে সিংয়ের সফর ছিলো অস্বাভাবিক।

সূত্রগুলো জানায়, ভারতীয় মন্ত্রীরা তাদের বৈঠকে ইরানের কাছে নিশ্চয়তা চান যে চীনের সঙ্গে চুক্তির কারণে চাবাহার বন্দরে যেন ভারতের অংশগ্রহণ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

২০১৬ সালে ইরান, ভারত ও আফগানিস্তান এই বন্দর ব্যবহারের জন্য ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই করে। যার উদ্দেশ্য ছিলো পাকিস্তানি বন্দরের উপর নির্ভরতা কমানো।

ভারতের উদ্বেগ

চাবাহার থেকে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর জাহেদান পর্যন্ত ৬২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ নির্মাণ নিয়ে নয়া দিল্লী ও তেহরান এমওইউ সই করেছিলো। কিন্তু এই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি খবর প্রকাশ পায় যে ইরান এই প্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দিয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দুই পক্ষ এই ১.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিয়ে কোন চুক্তি করতে ব্যর্থ হয়।

এমন সময়ে তেহরান-বেইজিং চুক্তির খবরটিও প্রকাশ হয়ে পড়ে। এতে নয়া দিল্লীতে উদ্বেগ দেখা দেয়।

অত্যন্ত উঁচু পর্যায়ের একটি কূটনৈতিক সূত্র বলে, গুরুত্বপূর্ণ ভূরাজনৈতিক কারণে চাবাহার বন্দরে ভারতের বড় ধরনের স্বার্থ রয়েছে। এই বন্দর ভারতকে আফগানিস্তানের সঙ্গে ‍যুক্ত করবে। সেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের শত্রুতা রয়েছে। দুই দেশই আফগানিস্তানকে প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্র মনে করে।

আর সে কারণেই চীনকে নিয়ে ভারতের উদ্বেগে কোন খাদ নেই। ইরানে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি ও রেলপ্রকল্প থেকে বাদ পড়ায় তাই ভারত উদ্বিগ্ন।

দুই মন্ত্রীর সফরকে হারানো ভূমি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমন এক সময় এই সফর অনুষ্ঠিত হলো যখন কাশ্মীর সীমান্তে চীনের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ভারত। সিংয়ের তেহরান সফরের এটাও একটি কারণ বলে মনে করা হয়।

ভারতে একসময় কাজ করেছেন এমন এক সাবেক ইরানি কূটনীতিক বলেন, মোদি সরকারের আমলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের জোরদার সম্পর্কটি ইরান ভালোভাবে নেয়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কূটনীতিক বলেন, ইরান তার স্বার্থ রক্ষা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই চীন ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ-মেয়াদি চুক্তি সই করেছে।

তেহরানভিত্তিক ভূকৌশলগত বিশ্লেষক আলিরেজা আহমাদি অবশ্য মনে করেন না যে এখনই সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। তার মতে, দুই মন্ত্রীর সফর বলে দিচ্ছে যে দুই দেশ উন্মুক্ত ও স্থিতিশীল সংলাপ চালিয়ে যেতে চায়।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের চুক্তিটি এখনো রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি মাত্র। কবে কার্যকর হবে কেউ জানে না। ফলে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে ভারতের।

Source আনাদোলু এজেন্সি