
রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিরোধী দল গঠন করেছে সৌদির নাগরিকরা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আমেরিকা ও বৃটেনে নির্বাসিত সৌদি নাগরিকেরা ‘ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পার্টি’ নামে ওই দল গঠনের ঘোষণা দেন।



কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বলছে, বাদশাহ সালমানের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এটাই সে দেশে প্রথম কোনও সংগঠিত রাজনৈতিক প্রতিরোধ।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র হিসেবে সৌদি আরব একটা নিখুঁত রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কোনও ধরনের রাজনৈতিক বিরোধিতার সুযোগ নেই সেখানে।
সম্প্রতি ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর দমনপীড়ন আরও বেড়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিরোধী দল গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।



এর আগে ২০০৭ ও ২০১১ সালেও বিরোধী দল গঠনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল। তবে গ্রেফতারসহ বিভিন্ন ধরনের বলপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে তা দমন করা হয়।
এবার যারা দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন, বুধবার তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে: আমরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি পার্টি নামের একটি রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য সৌদি আরবে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা।



ঘোষিত রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, দলের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছেন লন্ডনভিত্তিক বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ইয়াহা আসিরি। সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষাবিদ মাদায়ি আল-রশিদ, গবেষক সাঈদ বিন নাসের আল-গামদি, আমেরিকায় নির্বাসিত আবদুল্লাহ আলাউদ এবং কানাডায় থাকা ওমর আবদুল আজিজ।
দলের সাধারণ সম্পাদক আসিরি এএফপিকে বলেছেন, এক চরম সংকটময় মুহূর্তে দেশকে রক্ষা করার তাগিদ থেকে আমরা এই দল গঠনের ঘোষণা দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং শাসনকাজে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো।



আরও সংবাদ
রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট না দিলে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হুমকি সৌদির
রোহিঙ্গা ইস্যুটি বার বার গলার কাঁটা হয়ে উঠছে বাংলাদেশের। সৌদি আরবে অবস্থানরত ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকে এবার বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে চাপ দিচ্ছে দেশটি।
না হয় সেখানে কর্মরত ২২ লাখ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে। তবে কোন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ নিয়ে আগামী রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) জরুরি বৈঠকে বসবেন দু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।



আগে থেকে অবস্থানরত ৩ লাখসহ প্রায় সাড়ে ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস এখন বাংলাদেশে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে সৌদি আরবের চাপ।
মানবিক কারণ দেখিয়ে ৮০/৯০ সালের দিকে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয় সৌদি। বাংলাদেশি ভুয়া পাসপোর্ট নিয়েও অনেক রোহিঙ্গা দেশটিতে যায়। এখন সে দেশে আশ্রয়রত ৫৪ হাজার রোহিঙ্গাকেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিতে চাপ দিচ্ছে সৌদি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘তারা ঐ ৫৪ হাজার বাংলাদেশিকে ফেরত আনতে বলেনি, তবে বলছে আমাদের দেশের পাসপোর্ট তাদের দিতে।’



নতুবা বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর হুমকি বাংলাদেশি শ্রমিকদের অন্যতম এ বাজারের। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘সৌদি বলছে এই রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট ইস্যু না করলে অন্যান্য দেশের চেয়ে তোমাদের দেশ থেকে যে বেশি লোক আনছি সেটা বন্ধ করে দেবো। এবং তোমাদের যে ২২ লাখ জনবল এখানে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা নেতিবাচক অবস্থান নেবো।’
সৌদির দাবিতে রোহিঙ্গাদের কাগজপত্র যাচাইয়ে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করেছে বাংলাদেশ।



তবে চাপের কাছে নতি স্বীকার না করার পরামর্শ দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান।
তিনি বলেন, ‘পুরো বিষয়টি ঘটেছে আমাদের দুর্বলতার জন্য। শুধু এ ব্যাপরেই নয়, সব রাষ্ট্রের সাথেই কুটনৈতিক সম্পর্কটা একটু দৃঢ়তার সাথে রাখতে হবে।’
২৭ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জরুরি বৈঠকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি উত্থাপন করলে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ।