
জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জে সঞ্চয়ী আমানতের ছয় কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এক সমবায় সমিতির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে।
তারা হলেন আইনুল হক ও দৌলতুজ্জামান। গ্রাহকদের টাকায় নিজেদের নামে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি কিনে বহুতল ভবন নির্মাণ করে তা আবার বিক্রিও করেছেন তারা।



তাদের ফাঁদে পড়ে তিল তিল করে জমানো টাকার শোকে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন আমানতকারীরা।
জানা যায়, দুর্নীতির দায়ে জনতা ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত উপজেলার গুনারীতলা গ্রামের বাসিন্দা আইনুল হক ও একই এলাকার দৌলতুজ্জামান ২০০৫ সালে গুনারীতলা বাজারে উদয়ন সমবায় সমিতি গড়ে তুলে প্রতারণার ফাঁদ পাতে।
তারা সহজ-সরল গ্রাহকদেরকে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অন্তত ছয় কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে।



পরবর্তীতে আইনুল হক ও দৌলতুজ্জামান গ্রাহকদের টাকায় গাজীপুরের কাশিমপুরে ৮০ লাখ টাকায় নিজেদের নামে জমি কিনে পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করে জমি কেনা-বেচার ব্যবসা শুরু করেন।
গ্রাহকদের ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হলেও ওই দু’জন মুনাফাসহ গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে তারা সমিতির অফিসও বন্ধ করে রেখেছে।



আইনুল বুধবার পাওনা টাকা দিবে বলে জানালে গ্রাহকরা সমিতির অফিসে যায়। কিন্তু এর দু’দিন আগেই তিনি গা-ঢাকা দেন। এ সময় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা আইনুলের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে।
টাকা আমানত রেখে প্রতারণার শিকার গুনারীতল গ্রামের লাকি বেগম জানান, তিনি ওই সমিতিতে ১০ বছর মেয়াদি ডিপিএস খুলে মাসে পাঁচ হাজার টাকা কারে জমা রাখতেন। তার ডিপিএসের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে, কিন্তু আইনুল টাকা দিতে টালবাহানা করছে।



একই গ্রামের আঞ্জুয়ারা বেগম মাসে ৫০০ টাকা করে পাঁচ বছর মেয়াদি ডিপিএস খুলেছিলেন। তার কষ্টের টাকাও আত্মসাত করার পাঁয়তারা করছে আইনুল হক।
প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে অজ্ঞাত স্থান থেকে মোবাইল ফোনে আইনুল হক বলেন, সমিতির সম্পাদক দৌলতুজ্জামান সমিতির টাকা দিয়ে জমির ব্যবসা করতে গিয়ে প্রতারণা মাধ্যমে ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।



এরপর থেকে সমিতির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হতে থাকে। সমিতির টাকায় তাদের নামে আরো কয়েক জায়গায় জমি কেনা আছে, সেগুলো বিক্রি করে গ্রাহকদের পাওনা টাকা দিয়ে দিবো।
অপরদিকে দৌলতুজ্জামান বলেন, তিনি পাঁচ বছর আগে সমিতি থেকে অব্যাহতি নিয়ে গাজীপুরে জমি কেনা বেচার ব্যবসা শুরু করেন। গ্রাহকদের টাকায় গাজীপুরের কাশিমপুর উপজেলার সারাব মৌজায় তার (দৌলত) ও আইনুলের নামে কেনা সাড়ে ৮ শতাংশ জমিসহ ২০ ইউনিটের পাঁচতলা বাড়িটি তিনি আইনুলের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধের জন্য।



পরবর্তীতে আইনুল বাড়িসহ জমি অন্যত্র বিক্রি করে দিলেও গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করেনি। গাজীপুরে থাকার সময় তিনি একজন শীর্ষ শিল্পপতির ভাতিজা হিসেবে পরিচিতি পান। যার করণে ওই এলাকার লোকজন তাকে খুব সমীহ করতো।
মাদারগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শাহনাজ বেগম জানান, তিনি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছেন। ১৩৩টি সমিতির প্রতিটি তিনি এখনো পরিদর্শন করতে পারেননি।
উদয়ন সমবায় সমিতির কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি জানান, সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে তারা নিজেদের নিয়মে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। সমবায় সমিতির মাধ্যমে ডিপিএস খুলে মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে আমানত গ্রহণ করার নিয়ম নেই। কেউ অভিযোগ করলে ওই সমিতিরি বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।