
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক মানসিক প্রতিবন্ধী নারী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনি এক কন্যা সন্তান প্রসব করেন।



সকালে প্রসব যন্ত্রনা শুরু হলে নিজ বাড়িতে আশ্রয় ও সেবাদানকারী উপজেলার ময়ধরপুর গ্রামের দিনমজুর আমজাদ ছাকিরন দম্পতি স্থানীয়দের সহযোগীতায় কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর বিকেল ৪ টার দিকে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।
অসহায় এই মানসিক প্রতিবন্ধীর চিকিৎসার যাবতীয় খোঁজ খবর নেন স্থানীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার, ঝিনাইদহের ডিসি সরোজ কুমার নাথ ও কালীগঞ্জের ইউএনও সূবর্ণা রানী সাহা।



প্রতিবন্ধী নারী উপজেলার কোলাবাজারে ঘোরাফেরা করতেন। কখনো ময়লা কাপড় শরীরে জড়িয়ে একা একাই কি যেন বলতেন। কেউ কিছু বললে কখনো তেড়ে আসে। আবার কখনো দেখা যায় ঠান্ডা মেজাজে।
সপ্তাহ খানেক আগে ময়ধরপুর গ্রামের রাস্তার পাশে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন ওই প্রতিবন্ধী তরুণী। চোখ মেলে তাকাতে পারলেও তার ছিলনা কোনো নড়াচড়া।
সেই সময় পথচারী ও গ্রামের লোকজন ভিড় শুরু করে। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে থাকে। কিন্তু অসহায় অসুস্থ মানুষটি তো কারো না কারো সন্তান বা বোন।



এটা ভেবে বিবেকের তাড়নায় ওই গ্রামের আমজাদ আলী,আব্দুর রশিদসহ বেশ কয়েকজন তাকে নিয়ে কালীগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
চিকিৎসক রোগী দেখেই বললেন মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা। এখন তার পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম দরকার। দেয়া হলো প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা।
এরপর বেশ খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠতেই হাসপাতালে শুয়েই শুরু করে অসহ্য পাগলামী। অস্থির করে তোলে গোটা হাসপাতাল এলাকা। বাধ্য হয়ে গাড়ি ভাড়া করেই আবার তাকে নিয়ে এলাকায় যান।



এরপর আশ্রয় দেয়ার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও অস্থিরতার কারণে সবাই এড়িয়ে যান। এমন অবস্থায় অসুস্থ ওই প্রতিবন্ধী তরুণীকে বিবেকের তাড়নায় আর বাজারে ছেড়ে দিতে পারেননি দিনমজুর আমজাদ আলী।
গর্ভের সন্তানের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ বাড়িতে নিয়ে আশ্রয় দিয়ে সেবা যত্ন করতে থাকেন। দিনমজুর আমজাদের অভাবের সংসার হলেও তার স্ত্রী ছাকিরন নেছা নিজের সংসারের সদস্যের মত করে সেবা যত্ন ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।



তাদের এই মহত্বের বিষয়টি তুলে ধরে দিনমজুর আমজাদের মানবিকতার দৃষ্টান্ত শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর শুক্রবার বিকেলে কালীগঞ্জ হাসপাতালে এই প্রতিবন্ধী তরুণী ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিলে বেজায় খুশি আমজাদ-ছাকিরন দম্পতি।
কালীগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার আফসানা পারভিন জানান, ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে প্রতিবন্ধী তরুণী স্বাভাবিক না থাকায় ছোট একটি অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান বের করা হয়েছে। তবে মা ও নবজাতক এখন সুস্থ আছেন।



ইউএনও সূবর্ণা রানী সাহা জানান, খবর পেয়েই তিনি হাসপাতালে যোগাযোগ করে অসহায় প্রতিবন্ধীর ব্যাপারে কখা বলেছেন। যে কোনো প্রয়োজনেই তিনি তার পাশে থাকবেন।
ডিসি সরোজ কুমার নাথ জানান, প্রতিবন্ধী মায়ের পাশে যারা দাঁড়িয়েছেন তারা অবশ্যই সহৃদয়তার পরিচয় দিয়েছেন। নিজে দিনমজুর হয়েও আমজাদ – ছাকিরন দম্পতি এ প্রতিবন্ধীকে পরিবারের একজন সদস্যের মত করে সেবা করছেন এজন্য ওই পরিবার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সদ্যজাত নবজাতকের চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।