
পেছন থেকে মোটরসাইকেলে আসা এক ব্যক্তি হঠাৎ খামচে ধরে তার জামা ছিড়ে ফেলে। এরপর গালাগাল করতে করতে চলে যায়। চিৎকার শুনে কেউ এগিয়েও আসেনি।
রিকশায় বাসায় ফেরার পথে এমন আক্রমণের শিকার হওয়ার কথা ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন নি’পী’ড়’নে’র শিকার এক তরুণী। প্রশ্ন রেখেছেন, স্বাভাবিক নিরাপত্তা নিয়ে এদেশে বাঁচবেন কীভাবে?



বৃহস্পতিবার বিকালে শাহবাগ থানায় গিয়ে মৌখিকভাবে এ বিষয়ে অভিযোগও জানিয়েছেন তিনি।
পুলিশ লিখিত এজাহারের অপেক্ষায় জানিয়ে শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার বলেন, “একটা ঘটনা ঘটেছে। আমরা মৌখিকভাবে জানতে পেরেছি। তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।



“সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
ওই তরুণী কোথায় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন জানতে চাইলে ওসি বলেন, “তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরেই আমরা সব বলতে পারব।”
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে পুলিশের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।



শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার কামরুন্নাহার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ওই তরুণীসহ কয়েকজন থানায় এসেছিলেন। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। তারা তরুণীর ভাষ্য শুনেছেন। নিপীড়নকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
ওই তরুণী একটি বেসরকারি রেডিও স্টেশনে কর্মরত বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

ফেইসবুকে নিজের ওয়ালে ওই ঘটনা নিয়ে নিজের ছেঁড়া জামা পড়া একটি ছবি পোস্ট করে তিনি লিখেছেন, “এই যে আমার ছেঁড়া জামাটা দেখতেছেন, এটাই আপনাদের বাংলাদেশ।



“এই দেশে মেয়েদের মলেস্ট হওয়া, হ্যারাস হওয়া, রেপ হওয়া, গালি খাওয়া স্বাভাবিকভাবে মেনে থাকতে পারলে থাকেন, নাইলে এই রাগে দুঃখে ট্রমাটাইজ হয়ে সুইসাইড করেন, মরে যান, যা খুশি করেন কিন্তু প্রতিরোধ কিংবা বিচারের আশা কইরেন না।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই তরুণী লিখেছেন, “একটা লোক বাইক নিয়ে রিকশার পেছন থেকে এসে আমার বুক খামচে টেনে জামা ছিঁড়ে আমাকেই গালাগাল করতে করতে চলে গেল।



“আশেপাশে একটা পুলিশ নাই, একটা মানুষ এসে ধরল না, আমার চিৎকার শুনে। আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। আমার শরীর এখনো কাঁপতেছে ভয়ে। আমার সাথে এমনটা কেন হলো?”
তিনি লেখেন, “কখনো ভাবি নাই আমার ঢাকা শহরে আমার সাথেই এমন কিছু হতে পারে। একটা মানুষ আগায় আসলো না। একটা মানুষও না। এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেওয়ার পারমিশন দিতে হবে?



“নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিবো? আর কারে গিয়ে বললে একটু স্বাভাবিক সিকিউরভাবে এদেশে বাঁচতে পারবো?”
এর আগে গত ১৮ মে নরসিংদী রেলস্টেশনে ‘অশালীন পোশাক পরার অপবাদ’ দিয়ে এক তরুণীকে হেনস্থা করা হয়, পরদিন যার ভিডিও ছড়ায় নেট দুনিয়ায়। ওই ঘটনা আলোচনায় আসার পর এক নারীসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নরসিংদীর ওই ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে হেনস্থা হওয়া তরুণী লিখেছেন, “…কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে বাসায় ফিরতেছিলাম। আমার এই ড্রেসে ঠিক কী খারাপ ছিল যার কারণে এমন ঘটনা ঘটলো? পোশাকের দোষ দেওয়া মানুষগেুলো সালোয়ার কামিজে একটা মেয়েকে কী নিয়ে দোষ দিবে?’