
কয়েক দিন ধরে বাবা অসুস্থ। উপার্জন না থাকায় চার সদস্যের পরিবারের ঠিকমতো খাবার জোটেনি। অনেকটা নিরুপায় হয়েই বাবার ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বের হয়েছিল শরীফুল ইসলাম (১২)।
কিন্তু যাত্রী বেশে ওঠা তিন দু’র্বৃ’ত্ত তার গলায় ছু’রি ঠেকিয়ে ভ্যানটি ছি’ন’তা’ই করে নিয়ে যায়।



নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সোনাবাজু এলাকায় আজ শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটেছে। পরিবারের উপার্জনের একমাত্র বাহনটি হারানোর পর থেকে শরীফুলের কান্না যেন থামছেই না। খবর পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ওই কিশোরকে থানায় নিয়ে যান।
শরীফুল বলে, গুরুদাসপুর পৌরসভার আনন্দনগর মহল্লার একটি ভাড়া বাসায় তাঁরা থাকেন।



তার বাবার নাম বিপ্লব হোসেন। দুই ভাই ও মাকে নিয়ে চারজনের সংসার তাঁদের। সে নারায়ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ছোট ভাইয়ের বয়স চার বছর।
তার বাবা অসুস্থ থাকায় কয়েক দিন ধরে কোনো আয় নেই। ঘরে বাজার-সদাই না থাকায় গতকাল বাবার ভ্যানটি নিয়ে বের হয় শরীফুল।



শরীফুল আরও বলে, পৌর শহরের চাঁচকৈড় হাটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকে। দুপুরে দুজন যাত্রী উপজেলার সোনাবাজুতে যাওয়ার জন্য ওঠে।
সেখানে পৌঁছানোর পর ভ্যানে বসা দুই যাত্রী তাকে বলেন, তাঁদের সঙ্গে আরেকজন যাবেন। তাঁকে নিয়ে পাশের মানিকপুর (বড়াইগ্রাম উপজেলা) যেতে হবে। এ জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলে তাকে।



কিছুক্ষণ পর মোটরসাইকেল নিয়ে এক ব্যক্তি আসেন তার ভ্যানের কাছে। এ সময় অনেকটা জোর করে তাকে ভ্যান থেকে নামিয়ে দেয় যাত্রীবেশী দু’র্বৃ’ত্ত’রা। একপর্যায়ে গলায় ছু’রি ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলেন।
কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই ভ্যান নিয়ে চলে যায় দু’র্বৃ’ত্ত’রা। পরে তার চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এলেও ভ্যানটি আর পাওয়া যায়নি।



শরীফুল বলে, তার বাবা অতিদরিদ্র। থাকার জায়গাটি পর্যন্ত নেই। ভাড়া বাড়িতে বসবাস করে। একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ২৪ হাজার ৫০০ টাকা ঋণ নিয়ে ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি কিনেছিলেন মাসে তিনেক আগে।
ভ্যানটি ছি’ন’তা’ই হওয়ার ফলে না খেয়ে থাকতে হবে তাঁদের। ভ্যানটি উদ্ধার করে দেওয়ার আবেদন জানায় সে।



গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিন জানান, কিশোরের অভিযোগটি অনুসন্ধানে শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থাপন করা সিসিটিভির ফুটেজগুলো পরীক্ষা করা হচ্ছে। পুলিশের দল ভ্যানটি উদ্ধার ও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।