
সিলেটে ঘুরতে আসলে প্রথমেই আপনার মাথায় যে প্রশ্ন আসবে তা হলো কোথায় যাবো? সিলেটে যাওয়ার মতো জায়গার নাম গুনে শেষ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু বিখ্যাত ও দর্শনীয় স্থানে না গেলে আপনার ভ্রমণটাই বৃথা। চলুন আজ জেনে নেই সিলেটের সেরা ১০ টি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ।
ফটো গ্রহণ করা হয়েছে jugantor.com থেকে
১. জাফলং
সিলেটে এসে প্রথমেই আপনার যাওয়া উচিত সিলেটের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য জাফলং এ। সিলেটে আসবেন আর জাফলং যাবেন না সেটা এক প্রকার অসম্ভব।
জাফলং এ কেন যাবেন তার উত্তর দিতে হয়তো পাতার পর পাতা লেগে যাবে। এক বাক্যে বললে জাফলং এ আপনি যে প্রাকৃতিক রূপের দেখা পাবেন তা দেখে হয়তো আপনার জীবনানন্দ বা আল মাহমুদ হওয়ার ইচ্ছা জগতে পারে।
তবে খোদ জাফলং এর থেকে জাফলং এ যাওয়ার রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই আপনাকে অধিক বিমোহিত করবে।
অবস্থান : জাফলং এর অবস্থান সিলেট থেকে ৬০ কি মি দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায়। তামাবিল সীমান্তের ঠিক পাশেই অবস্থিত আমাদের প্রিয় জাফলং। সামনে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় এবং ছবির মতো সাজানো শহর ডাউকি।
যেভাবে যাবেন : সিলেট থেকে জাফলং যেতে সর্বোচ্চ ২-২.৫ ঘন্টা সময় লাগতে পারে। যেতে পারেন ২ ভাবে। লোকাল বাস এ অথবা সি এন জি চালিত অটো রিকশা বা প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস রিজার্ভ করে।
রাস্তা দুর্দশাগ্রস্ত হলেও রাস্তার পাশে ছবির মতো সুন্দর পাহাড় ও ঝর্ণায় আপনি মোহিত হতে বাধ্য।
মূল আকর্ষণ : জাফলং এর প্রধান আকর্ষণ মেঘালয়ের মেঘের কোল থেকে নেমে আশা পাহাড়, স্বচ্ছ ঠান্ডা পানির পিয়াইন নদী, নদীর তলদেশে সুন্দর লাল, কালো, সাদা, ধূসর পাথর, জিরো পয়েন্ট, ঝুলন্ত ব্রিজ, স্থানীয় পাথরের সামগ্রী, খাসিয়া পল্লী, পিকনিক স্পট এবং একই সাথে নদী আর পাহাড়ের এক অপূর্ব সম্মিলন।
প্রকৃতির এই অনন্য দৃশ্যই পর্যটকদের মূল আকর্ষণ। থাকতে চাইলে থাকতে পারেন জৈন্তা হিল রিসোর্ট কিংবা জাফলং ভ্যালি রিসোর্ট এ।
২. রাতারগুল
সিলেট এর সুন্দরবন নাম খ্যাত রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট হিসেবে সুপরিচিত। দেশের একমাত্র মিঠাপানির এই জলাবনে খুঁজে পাওয়া যায় উদ্ভিদ ও প্রানির বৈচিত্রময় অবস্থান এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
সুযোগ রয়েছে নৌকা ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে এই আশ্চর্য প্রকৃতিকে একদম কাছে থেকে দেখার। রাতারগুলের এই বন আপনাকে বেঁধে রাখবে প্রকৃতির মায়াবী সৌন্দর্যের বাঁধনে।
অবস্থান : রাতারগুল সিলেট থেকে ২১ কি মি দূরে অবস্থিত ফতেহপুর ইউনিয়ন এর গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত।
রাতারগুলের সাথেই রয়েছে গোয়াইন নদী। এই নদী থেকে উৎপন্ন চ্যানেল রাতারগুল এর মধ্যে দিয়ে মিশেছে চেঙ্গীর খাল এ।
যেভাবে যাবেন : রাতারগুল যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো লোকাল সি এন জি চালিত অটোরিকশা অথবা রিজার্ভড গাড়ি। সিলেট থেকে এয়ারপোর্ট বাইপাস হয়ে মাত্র ১-১.৫ ঘন্টায় চলে যেতে পারেন রাতারগুল।
গাড়িতে গিয়ে নামতে হয় মোটরঘাট এ। সেখান থেকে ভাড়া করতে হয় নৌকা। এই নৌকাই নিয়ে যাবে আপনাকে গহীন বনে, একদম প্রকৃতির কাছে।
যাওয়ার জন্যে বর্ষাকাল সবচেয়ে ভালো সময়। এছাড়া দিনে দিনে ঘুরে সিলেটের অন্যান্য জায়গা পরিদর্শনে যেতে পারেন।
মূল আকর্ষণ : রাতারগুল এ যাওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে প্রকৃতিচর্চা। প্রাকৃতিক বৈচিত্রের এতো কাছাকাছি পৌঁছানোর সুযোগ অন্য কোথাও পাবেন বলে আমি বিশ্বাস করিনা।
বাংলাদেশের একমাত্র রাতারগুলেই পাওয়া যায় বন্য কাঠ গোলাপ। দেখা মেলে আরো নানা বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের। নৌকা ভ্রমণের সময় চোখে পরবে সাপ, বানর, কাঠবিড়ালি, সজারু এবং নানা প্রজাতির পাখির।
রাতারগুল এর আশেপাশে হোটেল বা থাকার তেমন ব্যবস্থা নেই। তাই ১ দিনেই ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির এই নিসর্গ থেকে।
সিলেটের কাশ্মীর হিসেবে খ্যাত সাদা পাথর এর নাম থেকেই এই জায়গার বিশেষত্ব বোঝা যায়। অপেক্ষাকৃত নতুন এই প্রাকৃতিক স্পট এখন সিলেট এ আশা পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।
৩. ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর
মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে সাদা পাথরের দ্বীপ যেখানে স্বচ্ছ ঠান্ডা পানির ঠিক অপর পাশেই দেখা যায় প্রতিবেশী ভারত কে। পাথর, নদী আর পাহাড়ের এই স্বর্গভূমি আপনাকে আকর্ষণ করবে চুম্বকের মতন।
অবস্থান : সাদা পাথরের অবস্থান সিলেট শহর এর অদূরে সিলেট -কোম্পানীগঞ্জ – ভোলাগঞ্জ হাইওয়ে তে ভোলাগঞ্জ উপজেলায়।
এর ওপর নাম ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর। সিলেট থেকে মাত্র ৩৫ কি মি দূরে এই সাদাপাথরে খুব অল্প সময়েই ঘুরে আসতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন : সিলেট থেকে যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সাদা পাথর পরিবহন বা বি.আর.টি.সি বাস। তবে চাইলে গাড়ি রিসার্ভ করতে পারেন।
মাত্র ১ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন ভোলাগঞ্জ এ। সেখান থেকে পাওয়া যায় নৌকা। নৌকায় চড়ে ১৫-২০ মিনিটে পৌঁছে যাবেন সাদা পাথরের মূল স্পট এ।
মূল আকর্ষণ : সাদা পাথরের মূল আকর্ষণ হলো প্রকৃতি। বর্ষাকালে এই প্রকৃতি আরো আবেদনময়ী হয়ে উঠে। তখন স্বচ্ছ পানির নিচে সাদা পাথর, সাদা বালি, মেঘালয়ের পাহাড় আর উড়তে থাকা মেঘের খেলাঘরে পরিণত হয় এই জায়গা।
জলে নামার জন্যে ব্যবস্থা আছে টিউব এর। একটা টিউব নিয়ে ভেসে পড়তে পারেন স্বচ্ছ জলে। পাওয়া যায় প্যাডেল বোটও। অদূরে অবস্থিত লেক আর পাহাড়ি দৃশ্য আপনাকে প্রাণবন্ত করে তুলবে।
গোয়াইনঘাট উপজেলার আরেক সৌন্দর্যে ঘেরা প্রাকৃতিক স্বর্গভূমির নাম বিছনাকান্দি। ভারতের খাসি পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আশা ঝর্ণার জলে সৃষ্ট এই প্রাকৃতিক স্থান অন্যপাশে পিয়াইন নদীতে গিয়ে মিশেছে।
ভারত-বাংলাদেশ বর্ডার এ অবস্থিত এই জায়গায় ২ পাশ থেকে ঘিরে রাখা খাসি পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলে পাথুরে নদী। মূলত খাসি পাহাড় থেকেই এই পাথরের উৎপত্তি।
পাহাড়ের উপরে খেলা করে ধূসর-কালো মেঘ। পাহাড়, নদী আর মেঘের এই রাজ্যে আপনাকে হারাতেই হবে।
৪. বিছনাকান্দি
অবস্থান : সিলেট থেকে ৪০ কি মি দূরে রুস্তমপুর ইউনিয়ন এর জৈন্তাপুর উপজেলায় বিছনাকান্দির অবস্থান। খাসি পাহাড় আর পিয়াইন নদীর উপর অবস্থিত এই জায়গায় যেতে হয় হাদারপাড় থেকে।
যেভাবে যাবেন : প্রথমে যেতে হবে হাদারপাড়। সিলেট শহর থেকে সি এন জি চালিত অটো রিক্সা বা গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। এয়ারপোর্ট রোড বাইপাস হয়ে মাত্র ২-২.৫ ঘন্টায় পৌঁছে যাবেন হাদারপাড়।
হাদারপাড় থেকে নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। নৌকায় করে প্রায় ১ ঘন্টার ভ্রমণ শেষে পৌঁছে যাবেন বিছনাকান্দি। চাইলে একই নৌকায় ঘুরে আসতে পারেন পান্থুমাই বা বড়হিল ঝর্ণা থেকে।
মূল আকর্ষণ : বিছনাকান্দির মূল আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের দৃশ্য। নৌকায় ভ্রমণকালে চোখে পরে ছবির মতো সাজানো খাসি পাহাড়ের সারি।
পাহাড়ের গায়ে লেগে থাকে মেঘ। নদীর পার ঘেঁষে দেখা যায় সবুজ ছোট ছোট দ্বীপ। এইসব দ্বীপে রয়েছে ছোট ছোট ঘরবাড়ি। বিছনাকান্দির কাছে আসতেই চোখে পরবে পাহাড় আর পাথুরে নদী।
বিছনাকান্দি নেমে ভাসমান হোটেলে চুমুক দিতে পারেন এক কাপ গরম চায়ে। এরপর নেমে পড়তে পারেন নদীতে।
পাথরের উপর দিয়ে হেটে হেটে নদীতে ভিজিয়ে নিতে পারেন নিজেকে। এভাবেই প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে পারেন সপরিবারে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত আরেকটি প্রাকৃতিক নিসর্গভুমি লালাখাল। পাহাড়, বন, চা বাগান আর নদীর অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা এই জায়গা জাফলং, সাদা পাথর বা বিছনাকান্দি থেকে বেশ ভিন্ন।
৫. লালাখাল
এখানে পুরো ভ্রমণই সম্পন্ন করতে হয় নৌকায়। গাঢ় নীল পানির উপর শান্ত গতিতে চলে যাওয়া নৌকায় বসে উপভোগ করতে পারেন মেঘালয়ের পাহাড়, চা বাগান আর সবুজে ঘেরা ছোট ছোট দ্বীপ।
এ যেন প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের এক মহা আয়োজন।
অবস্থান : সিলেট থেকে প্রায় ৪৪ কি মি দূরে অবস্থিত এই লালাখাল জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সারি নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করা চ্যানেল এর উপরেই লালাখালের অবস্থান।
তামাবিল রোড এর খুব কাছে অবস্থিত এই লালাখাল আপনি ঘুরে আসতে পারেন জাফলং থেকে আসার পথেই।
যেভাবে যাবেন : লালাখাল যাওয়ার লোকাল বাস পাওয়া যায় না। তাই আপনাকে যেতে হবে গাড়ি অথবা সি এন জি রিসার্ভ করে।
সিলেট থেকে ২.৫ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন সারিঘাট। সারিঘাট থেকে পাওয়া যায় ইঞ্জিনচালিত নৌকা। নৌকা ভাড়া করেই শুরু হবে মূল ভ্রমণ।
নৌকায় প্রায় ১-২ ঘন্টা ঘুরতে পারবেন। নৌকাই দায়িত্ব নিবে আপনাকে প্রকৃতির ঠিক কাছে পৌঁছে দিতে।
মূল আকর্ষণ : লালাখালের মূল আকর্ষণ এর পানি। গাঢ় নীল জল থেকে শুরু করে সবুজ জল এবং স্বচ্ছ জলের এক অবিশ্বাস্য পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন নৌকাভ্রমণের সময়।
এই নৌকাভ্রমণে অন্য মাত্রা যোগ করবে এর চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য। আকাশচুম্বী মেঘালয়ের পাহাড়, সবুজ চা বাগান, বালিয়াড়ির উপর সূর্যালোকের সৌন্দর্য ইত্যাদি। চাইলে শরীর ভেজাতে পারেন স্বচ্ছ নীল জলে।
এছাড়া আছে সারি ব্রিজ, ইরাবতী, জিরো পয়েন্ট ইত্যাদি। ঘুরা শেষে খাওয়াদাওয়া সারতে পারেন রিভার কুইন রেস্টুরেন্ট থেকে।
৬. শ্রীমঙ্গল
মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত হলেও সিলেট এর একদম কাছে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। শ্রীমঙ্গল মূলত চায়ের শহর নামেই বেশি পরিচিত। সবুজ প্রেমীদের কাছে শ্রীমঙ্গল হতে পারে তীর্থস্থান।
অবস্থান : সিলেট থেকে ৮০ কি মি দূরে অবস্থিত শ্রীমঙ্গল মূলত মৌলভীবাজার জেলার একটি উপজেলা। কমলগঞ্জ, বহুবল দিয়ে ঘেরা এই উপজেলা সিলেট বিভাগ এর অন্যতম সৌন্দর্যের খনি।
যেভাবে যাবেন : সিলেট থেকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার সবচেয়ে সহজ রাস্তা হলো রেলপথ। সিলেট থেকে ঢাকা কিংবা চট্টগ্রাম গামী যেকোনো ট্রেন এ করেই শ্রীমঙ্গল পৌঁছানো যায়। এছাড়া শহর থেকে রয়েছে বাস সার্ভিস।
চাইলে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। সিলেট থেকে ট্রেনএ শ্রীমঙ্গল পৌঁছাতে সময় লাগবে প্রায় ২ ঘন্টা। স্টেশন থেকে নেমে অটো রিক্সায় পৌঁছে যেতে পারবেন সব আকর্ষণীয় স্পট এ।
মূল আকর্ষণ : শ্রীমঙ্গল এর মূল আকর্ষণের মধ্যে অন্যতম : লাউয়াছড়া, মাধবপুর লেক, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট, চা বাগান, ৭ রঙের চা।
ফেরার সময় কিনতে পারেন খাঁটি চা পাতা। শ্রীমঙ্গল যাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো বর্ষাকাল। বর্ষাকালে সবুজের যে অপরূপ স্নিগ্ধতা চোখে পরে তাতে আপনি প্রকৃতিপ্রেমী না হয়ে পারবেন না।
৭. চা বাগান
সিলেট শহরে ঘুরতে যাওয়ার মতো জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মালনীছড়া চা বাগান। বাংলাদেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে পরিচিত এই মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫৪ সালে।
সবুজে ঘেরা এই চা বাগানে প্রবেশ করলে দেখা যায় চা শ্রমিকদের বসতবাড়ি, রাবার বাগান এবং সবুজ এ ঘেরা টিলার রাস্তা। সবুজের আবেদনে আপনাকে আসতেই হবে মালনীছড়ায়।
অবস্থান : সিলেট শহর এলাকার একটু বাইরে এয়ারপোর্ট রোড এই এই মালনীছড়া চা বাগান এর অবস্থান। বিকেলে গিয়েই ঘুরে আসতে পারেন এই সবুজের স্বর্গ থেকে।
যেভাবে যাবেন : সিলেট শহরের যেকোনো জায়গা থেকে সি এন জি চালিত অটোরিকশা আপনাকে মালনীছড়া নিয়ে যাবে। আম্বরখানা থেকে লোকাল সি এন জি পাওয়া যায়।
আম্বরখানা থেকে মালনীছড়া পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র ১০-১৫ মিনিট। মালনীছড়ায় পৌঁছানোর পর চা শ্রমিকরাই গাইড হিসেবে ঘুরিয়ে দেখাবে পুরো বাগান।
মূল আকর্ষণ : মালনীছড়ার মূল আকর্ষণ সবুজ। আর এই সবুজ দেখতে হলে আসতে হবে বর্ষাকালে। পুরো রাস্তা হলো আঁকাবাঁকা টিলার রাস্তা। রাস্তা ধরে এগিয়ে নিয়ে যাবে গাইড।
পাহাড়ি রাস্তায় হাটতে হাটতে পৌঁছে যাবেন রাবার বাগান এ। মাঝে মাঝে দেখা মিলবে চা শ্রমিকদের। মাথায় মাথাল আর পিঠে চা নিয়ে ব্যস্ত যাদের বিকেল।
ভেতরে পাবেন কয়েকটি চা এর দোকান। বৃষ্টির দিন হলে এই গরম চা এর সৌন্দর্য বেড়ে যাবে আরো কয়েকগুন। উঁচুতে টিলার উপর উঠলে দেখতে পাবেন গোটা সিলেট শহর।
১-২ ঘন্টায় পুরো এলাকা ঘুরে সন্ধ্যার মধ্যেই চলে যেতে পারবেন বাসায় বা হোটেলে।
৮. হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার
সিলেট শহরের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার। সিলেট শহরের মধ্যে অবস্থিত এই মাজার সিলেট এ আগত পর্যটকদের প্রথম দর্শনীয় স্স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
শহরের মধ্যে হওয়ায় খুব সহজেই ঘুরে আশা যায় মাজার থেকে। অধ্যাত্বিকতা আর ইতিহাসের এক অনন্য নিদর্শন এই মাজার।
অবস্থান : সিলেট শহরের মধ্যেই, আম্বরখানা থেকে মাত্র ১ কি মি দূরত্বে পায়রা এলাকায় এই মাজারের অবস্থান। এক বিকেলে হাটতে হাটতেই ঘুরে আসতে পারেন হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার থেকে।
যেভাবে যাবেন : আম্বখানা থেকে পায়ে হেটে অথবা রিক্সায় মাত্র ১০ মিনিটেই পৌঁছানো যায় মাজারে।
মূল আকর্ষণ : মাজারের প্রবেশ পথেই দেখতে পাবেন সারি সারি দোকান, হোটেল আর রেস্টুরেন্ট। দোকানে পাওয়া যায় পর্যটক আকর্ষণকারী নানা সামগ্রী।
পাওয়া যায় সিলেটের চা পাতা আর ঐতিহ্যবাহী নিকোবিনার সাতকরার আচার। কিছু দোকানে বিক্রি হয় হালুয়া, মোমবাতি, ধাগা, আগরবাতি আর গোলাপজল।
মাজারে প্রবেশের পর দেখা যায় অসংখ্য জালালী কবুতর। রয়েছে গজার মাছের পুকুর, সোনালী মাছের কুয়া, হজরত শাহজালাল (র.) ও তার সহযোগীদের ব্যবহার্য রান্নার হাড়ি।
মাজারের উপরে দেখা মাইল ৩৬০ আউলিয়ার মধ্যে বহুজনের কবর। সবশেষে দেখা যায় হজরত শাহজালাল (র.) এর মাজার। তবে অনেক পর্যটক মাজারে এসে কুসংস্কারে জড়িয়ে পড়েন।
মাজারে অর্থ, আগরবাতি বা মোমবাতি দান করার কুসংস্কার এখানে বহু পুরোনো। এছাড়া এখানে আছে সিলেটের সবচেয়ে বড় মসজিদ। আছে স্থাপত্যকলার নানা নিদর্শন ও।
৯. খাদিমনগর পার্ক
সিলেট শহরের একদম কাছে অবস্থিত সবুজের আরেক সমারোহের নাম খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক। সবুজ জঙ্গলের সাথে জীববৈচিত্রের অপরূপ মিলন দেখা যায় এই পার্ক এ।
ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে স্বীকৃত এই পার্ক মূলত ৬ টি চা বাগান দিয়ে ঘেরা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে মনকে ভারহীন করতে চলে যেতে পারেন এই ন্যাশনাল পার্ক এ।
অবস্থান : সিলেট শহর থেকে মাত্র ১০ কি মি দূরে সিলেট জাফলং সড়কে শাহপরান মাজার গেটের একটু সামনেই এই পার্কার অবস্থান। পার্কার আগে দেখা যায় চা বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য।
যেভাবে যাবেন : খাদিমনগর যাওয়া যেতে পারে সি এন জি চালিত অটোরিকশা বা গাড়ির মাধ্যমে। সিলেট শহর থেকে পার্কে পৌঁছাতে প্রায় ১-১.৫ ঘন্টা সময় লাগতে পারে।
মূল আকর্ষণ : খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক এর মূল আকর্ষণ হলো চা বাগানের মাঝে জঙ্গলের অবস্থান। পার্কে প্রবেশের জন্যে ২ টি ট্রেইল আছে। ৪৫ মিনিট এবং ২ ঘন্টার এই ২ টি ট্রেইল এর যেকোনো একটির মাধ্যমে ঘুরে দেখতে পারেন পুরো বন।
ঘুরিয়ে দেখানোর দায়িত্বে থাকবেন একজন গাইড। কাঁচা ইট বিছানো রাস্তায় হাটতে হাটতে চোখে পড়বে নানা প্রজাতির বিরল উদ্ভিদের দিকে।
মেহেগনি, বট, সেগুন এদের প্রচুর দেখা যায় এই বনে। প্রাণীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সাপ, বানর, অজগর, বনমোরগ, বনবিড়াল, টিয়া পাখি, প্যাঁচা, বুনো হাঁস সহ আরো অনেক প্রাণী প্রজাতি।
এছাড়া এই পার্কে আছে ট্রেকিং এর ব্যবস্থা যা ট্যুরিস্টদের কাছে একটি প্রধান আকর্ষণ।
১০. আলী আমজাদের ঘড়ি
সিলেট শহরে অবতরণ করে প্রথম যে দর্শনীয় স্থান দিয়ে সকলকে যেতে হয় সেই স্থান ই হলো আলী আমজাদ এর ঘড়ি। শাহজাদী জাহান কর্তৃক স্থাপিত এই ঘড়ির নামকরণ করা হয় শাহজাদী জাহান এর পুত্র আলী আমজাদ এর নাম অনুসারে। সিলেটের ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে এই ঐতিহাসিক ঘড়ি।
অবস্থান : সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে চাঁদনীঘাট এলাকায় সুরমা নদীর উত্তর তীরে এই ঘড়ির অবস্থান। ঘড়ির ঠিক তলদেশ থেকেই শুরু হয়েছে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী কিন্ ব্রিজ এর।
যেভাবে যাবেন : সিলেট শহরের মধ্যে অবস্থিত এই ঘড়ি দেখতে পাবেন সিলেট এ নেমে বাসস্ট্যান্ড বা স্টেশন থেকে হোটেল কিংবা বাসায় যাওয়ার পথেই।
এছাড়া বিকালে রিক্সা নিয়ে চলে আসতে পারেন সুরমা নদীর পারে। আম্বরখানা থেকে ১০-১৫ মিনিট এর মধ্যেই রিক্সায় পৌঁছানো যায় আলী আমজাদের ঘড়িতে।
মূল আকর্ষণ : আলী আমজাদের ঘড়ির মূল আকর্ষণ হলো এর স্থাপত্যশৈলী। ব্রিজের এর কান ঘেঁষে উঠে যাওয়া এই লাল রঙের ঘড়ির সাথে লাল রঙের কিন্ ব্রিজ এর মেলবন্ধনে তৈরী হয় এক অন্যরকম সৌন্দর্যের।
ব্রিজ এর উপর থেকে এই ঘড়ি লাভ করে অন্য এক সৌন্দর্য। ব্রিজ এর উপর থেকে নদীর পাশেই ঘড়িটিকে অসাধারণ মনে হয়। এক ঘন্টা পর পর ঘড়িতে ঘন্টা বেজে উঠে।
ঘড়ি দেখা শেষে সুরমা নদীতে নৌকা ভ্রমণে যেতে পারেন। এছাড়া নদীর পারে বসে ফুচকা চটপটি খেতে খেতে প্রিয়জনের সাথে গল্প করে পার করতে পারেন এক অসাধারণ বিকাল।